১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস – History of the Language Movement of 1952

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের অন্যতম একটি নিদর্শন।বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করবার দাবীতে, ১৯৫২ সালে বাঙালীরা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে  আন্দোলনে শুরু করে, বাঙালিরা তাদের বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদা এনে দেয়।

আজকের আর্টিকেলটি দ্বারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর ইতিহাস সম্পর্কে  বিস্তারিত  আলোচনা করা হবে। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। আর্টিকেলটি দ্বারা আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন যেমন ১৯৪৭ ভাষা আন্দোলনের সূচনা,১৯৪৮: গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষার দাবি, ১৯৪৯: আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, ১৯৫০: বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব, ১৯৫১: ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত, ১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ । নিচে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো–

“মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা, তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।
তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো।
লক্ষ্মী মা রাগ করো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।

” কবিতার সেই ছেলেটি কথার ঝুড়ি নিয়ে কি তার মায়ের কাছে ফিরতে পেরেছিলো? না! ছেলেটি আর তার মা-এর কাছে ফিরতে পারেনি। চিঠিটাও পায়নি মা, কারণ পোস্ট করবার আগেই হানাদারের বুলেটে ঝাঁঝরা হওয়া বুকের তাজা রক্ত সে চিঠিকে করে দিয়েছিলো লাল, যেই লাল রঙ হার মানায় কৃষ্ণচূড়ার রঙকেও। 

ভাষা আন্দোলন কি ?

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের অন্যতম একটি নিদর্শন।বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করবার দাবীতে, ১৯৫২ সালে বাঙালীরা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে  আন্দোলনে শুরু করে, বাঙালিরা তাদের বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদা এনে দেয়। তাই ইতিহাসে এই ১৯৫২ সালের আন্দোলনকে ভাষা আন্দোলন বলা হয়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির মধ্য দিয়ে বাঙালীর স্বাধীনতা অর্জনের যে আকাঙ্ক্ষার বীজ বপন করা হয়েছিলো, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যেন সেই বীজথেকে বেরিয়ে আসা একটি ছোট্ট চারাটি, যা পরবর্তী সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানুষের মাঝে মুক্তির আক্ষাঙ্কা তৈরি করেছিল, যার ফলে আমরা বাংলাকে একটি স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তার 

দৈনিক আজাদ পত্রিকার ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৪ জুলাই ১৯৪৭সালে পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা নিয়ে েএকটি নিবন্ধ পএকাশ করেন। তিনি এই নিবন্ধে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্টভাষা করার প্রস্তাব দেন ।

উর্দু ভাষা

উর্দু একটি তাতার শব্দ । এর অর্থ হলো সেনানিবাস। মোগল সম্রাট আকবর তার সেনাবাহিনীর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উর্দু নামে একটি ভাষার প্রচলন করেছিলেন। এর বর্ণমালা নেয়া হয়েছিলেন মূলত আরবি ভষা থেকে এবং শব্দ ভান্ডার নেওয়া হয়েছিলো হিন্দি ভাষা থেকে ।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ছিল উর্দু। হিন্দি কথাগুলোকে আরবি হরফ দিয়ে বানান করে লেখা হলে সে ভাষাটাকে উর্দু ভাষা বলে । তিনি তার পিতা হুমায়ূনের মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে সম্রাট হয়েছিলেন । মুঘল সম্রাট আকবর উর্দু ভাষার প্রচলন করেন। তিনি বাংলা সনের প্রবর্তন করেন , মনসবদারি প্রথা চালু করেন ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বীন ই  ইলাহী নামে একটি নতুন ধর্ম প্রচলন করেন ও উর্দু ভাষা প্রচলন করেন সম্রাট আকবর।

১৯৪৭ ভাষা আন্দোলনের সূচনা

দ্বিজাতি তত্ত্ব: দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর মূল প্রেক্ষাপট জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৪৭ সালের সময়টায়। দীর্ঘ ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনের পর উপনিবেশিক শক্তি ইংল্যান্ড ভারত ভূমি থেকে বিদায় নেয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রদত্ত দ্বিজাতি তত্ত্বকে  (যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির পরিবর্তে ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়)-সামনে রেখে, ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য

পশ্চিম পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে নানা ভাবে শাসন ও শোষন করতে শুরু করে। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ দখল। পশ্চিম পাকিস্তান পরিকল্পিত ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত রাখে।ভৈৗগলিক দিক দিয়ে পূর্ব বাংলার বেশি অবদান থাকলেও সকল প্রকার উন্নয়ন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অর্থ বরাদ্ধ হতো অত্বন্ত্য বৈষম্য। ধীরে ধীরে পূর্ব বাংলার মানুষ বুজতে পারে এবং তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন।

শোষন মূলক আচারন বেশি প্রকট হয়ে ওঠে যখন বাংলাকে বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান উর্দু ভাষাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ ছিলো পাকিস্তানের বড় বড় সকল রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা সবাই উর্দু ভাষায় কথা বলতো এটাই তাদের কাছে প্রধান্য ছিলো। আবার মুসলীম লীগের নেতাদের প্রভাবেও ধীরে ধীরে উর্দু  ভাষা প্রধান হয়ে উঠতে শুরু করে। বাংলা ভূখন্ডের জনগণ তখনো উর্দুকে মেনে নিতে পারেনি, 

উর্দুকে সরকারি ভাষা ঘোষণা

ভাষার প্রতি প্রথম সরাসরি আঘাত আসে যখন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহউর্দুকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। যার ফলে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।এবং ঐ সময়ে গণমাধ্যমে প্রচুর উর্দুর ব্যবহার করা হতো,এমন কি ডাকটিকিট থেকে বাংলা অক্ষর সরিয়ে দিয়ে উর্দু ভাষায় করা , পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় গুলোয় কেবল উর্দু ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ- এই বিষয় গুলো শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাওয়ার জন্য এই সময় তমদ্দুন মজলিস জোর দাবী জানায়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব তোলে। এর প্রতিবাদে দেশে বিক্ষোভের সূচনা হলে সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৪৮ গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষার দাবি

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা দাবি

বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করবার প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টের এসেম্বলিতে প্রস্তাব তোলেন কুমিল্লার সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতা এই প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও প্রতিদ্বন্দী হিসেবে পাকিস্তান সরকার প্রস্তুত ছিল।

খাজা নাজিমুদ্দিন, লিয়াকত আলী খান প্রমুখের প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় এই বিল বারবার খারিজ হতে থাকে। এর প্রতিবাদে শামসুল আলম আহ্ববায়ক হিসেবে নির্বাচিত  হন ২ মার্চের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এবং১১ মার্চ হরতাল ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত দিনে ১১ মার্চ হরতাল চলাকালে শেখ মুজিব, শামসুল আলম সহ প্রায় ৬৯ জন গ্রেফতার হন। এতে আন্দোলন আরো বেড়ে গেলে ১৫ মার্চ বন্দিদেরকে মুক্তি দেয়া হয়।

রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষণ

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ ঢাকায় আসেন, ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যে বক্তাব্য দিছিলেন । আপনাদেরকে এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়। যে কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে সে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের শত্রু।

একটি রাষ্ট্রভাষা ছাড়া কোনো জাতিই একত্রে শক্তভাবে আবদ্ধ থাকতে পারে না এবং কাজ করতে পারে না। অন্যান্য দেশের ইতিহাস দেখুন। অতএব, যতদূর রাষ্ট্রভাষা উদ্বিগ্ন, পাকিস্তানের উর্দু হবে । এই বক্তব্যকে খাজা নাজিমুদ্দিন পুরোপুরি সমর্থন দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে জিন্নাহ একই বক্তব্য পেশ করলে প্রতিবাদে ফেটে পরে ছাত্রসমাজ।

১৯৪৯ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা

পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল

এই সময়ে, ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন, মাওলানা আবদুল হামীদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল হিসেবে একটি নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে, যার নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ।

যদিও পরবর্তীসময়ে সকল ধর্মের মানুষদের কথা চিন্তা করে এটির নাম পরিবর্তন করে এর নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। প্রথমে শামসুল হক  সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৬৬ সাল অব্দি, অর্থাৎ ১৩ বছর জাতির পিতা এই পদে দায়িত্বরত ছিলেন। 

১৯৫০ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব

আবার পুনরায় পার্লামেন্টে উর্দুকে ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রভাষা করবার প্রস্তাব করা হয়। বরাবরের মতো পূর্ব বাংলা এবারও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব বাংলার  অন্যান্য সকল রাজনৈতিক নেতারা তীব্রভাবে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে আওয়াজ তোলেন। ১৪ নভেম্বর ঢাকায় ( গ্র্যান্ড ন্যাশনাল কনভেনশন ) এর আয়োজন করা হয়।আর এই  কনভেনশনে, উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা করবার দাবী জানান হয়। 

১৯৫১: ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত

প্রথম ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠিত হয়। বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতিকে চর্চার জায়গাটি নিয়ে তারা ছিলেন সচেতন। এই বছরই আবারো পার্লামেন্টে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবনা রাখা হয়। কিন্তু পূর্বগঠিত কমিটি এই প্রস্তাবকে উদ্ভট বলে বাতিল করে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্ত সেই রিপোর্ট জনগনের সামনে আনা হলো না।

হাবিবুল্লাহ বাহার, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত- আরো অনেকে এই প্রস্তাবকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থাকে চিরতরে ধংসের উদ্দ্যোগ বলে অভিহিত করেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতায় পাকিস্তান সরকার এই প্রস্তাব বাতিল করতে বাধ্য হয়।

১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ

২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টনের এক সমাবেশে আবারো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করবার কথা বলেন। সমাবেশস্থল থেকেই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান উঠে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। 

২১ শে ফেব্রুয়ারি

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ৩১শে জানুয়ারি। গোলাম মাহবুবকে আহ্ববায়ক করে গঠিত এই সংগঠন থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই ধর্মঘটকে বানচাল করতে ১৪৪ ধারা জারি করে।

সর্বদলীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদে আবদুল হাশিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই দিন বেলা তিনটায় ছাত্ররা মিছিল নিয়ে বর্তমান জগন্নাথ হলের দিকে যাত্রা করে। পুলিশ গুলি ছোঁড়ে, রাস্তায় গড়ায় বরকত, রফিক আর জব্বারের রক্তরঞ্জিত দেহ। গুরুতর অবস্থায় সালামকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেও মৃত্যুবরণ করে। রক্তাত্ব রাজপথ যেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বরণের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি

পরের দিন সকাল হতে হতে, রাজপথের রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে। রাজপথে তখন আবারো উত্তেজিত জনতা জড়ো হতে শুরু করে। কার্জন হল এলাকায় শহীদদের জানাজা নামাজ আদায় করে পুনরায় মিছিল শুরু করে তারা। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী আবারো সেই মিছিলে গুলি চালায়। এবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শফিউর।

জনতার ঢল প্রবল আক্রোশে দি মর্নিং নিউজ পত্রিকার অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে সরকার খুব দ্রুত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার বিল উথাপন করে এবং তা সর্ব সম্মতিক্রমে পাশ হয়। বাংলা ভাষা তার ভূমিজ সন্তানদের আত্মত্যাগে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর মধ্য দিয়ে, নিজের সম্মান অর্জন করে।

শেষ কথা

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের অন্যতম একটি নিদর্শন।বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করবার দাবীতে, ১৯৫২ সালে বাঙালীরা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে  আন্দোলনে শুরু করে, বাঙালিরা তাদের বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদা এনে দেয়। আজকের আর্টিকেলটি দ্বারা আপনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-এর ইতিহাস সম্পর্কে  বিস্তারিত  ভাবে জানতে পেরেছেন। আসা করি সঠিক তথ্য গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

FAQ

1952 সালের ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল?

বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

1952 সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

নুরুল আমিন (উর্দু: نورالامین, বাংলা: নূরুল আমীন‎‎, ১৫ জুলাই ১৮৯৩ – ২ অক্টোবর ১৯৭৪) ছিলেন একজন বাঙালি নেতা, আইনবিদ, পাকিস্তান মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান। ১৯৪৮ সালে নুরুল আমিন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সরাসরি বিরোধীতাকারীদের একজন ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রতিষ্ঠানের নাম কি?

তমদ্দুন মজলিস ১৯৪৭ সালের ১ বা ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের, (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তুলে তমদ্দুন মজলিস বাংলা ভাষা আন্দোলন সূচনা করে।

ভাষা আন্দোলনের মিছিল কত মিনিট স্থায়ী ছিল?

1952 সালের ভাষা আন্দোলন এর মিছিলটি ঢাকা শহরে বাড়িহত একটি শিশুর মৃত্যু হওয়ার পর শুরু হয়। এই মিছিলটি শুরু হয় 21 ফেব্রুয়ারি 1952 সকাল 11 টা । এবং এর পরিষ্কার স্থায়ী সমাপ্তির সময় ছিল সকাল 11 টা ১৩ মিনিট। অর্থাৎ মিছিলটি প্রায় 2 ঘণ্টা ১৩ মিনিট চলে।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় কবে?

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর গঠিত হয়। পাকিস্তান সরকারের থেকে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে সেই সময় বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি ঘটেছিল?

১৯৫২ সালে এইদিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। যাঁদের মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত উল্লেখযোগ্য এবং এই কারণে এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে পাকিস্তানে মুসলিম লীগের মধ্যে চিড় ধরে, বিশেষত পাঞ্জাবি ও বাঙালিদের মধ্যে। পাকিস্তানের এই দুটি বৃহৎ জাতি গোষ্ঠী ভারতের মাধ্যমে পৃথক ছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের একটি মিছিল বাংলার জন্য সমান ও সরকারি মর্যাদা দাবি করলে তাতে গুলি বর্ষণ করা হয়।

21 শে ফেব্রুয়ারি কি?

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ‘অমর একুশে’, ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায়, বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হবে।

If you want to read English articles, you can visit our English Blog.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *